কৌশিক সেন
পাওয়ার ন্যাপ
কিছু কিছু অন্ধকার তুলে রাখা যায় মধ্যাহ্নভোজের পর, ভাতঘুমের ইশারায়।
টুথপিকে লেগে থাকা ছিবড়ে তন্তুতে যেন অস্ফুট মোরগ সকাল; বিনামেঘে
মুছে যায় মৃত্যুশোক। জলপাইরঙের স্বপ্ন ভরে রাখা যায় অস্বচ্ছ জলের বোতলে।
কিছু কিছু মেঘ নিঃসঙ্কোচে তুলে রাখা যায় পিতলের পানের বাটায়, সামুদ্রিক
লবণ লেগে থাকে ঘুমের আনাচে কানাচে। অবচেতনে পাক খায় অবরোহী।
কিউমুলোনিম্বাস। কিছু কিছু বেদনা টিফিনবক্সে ভরে রাখা যায়, জ্যাম পাউরুটির
মতো। বিক্ষত অনুভবে কামড় দেওয়া যায় অফিসের লাঞ্চটাইমে। ক্ষুধার্ত দুপুর
পাক খাবে ব্যস্ত ফাইলের দাবানলে। রমণের পর অগ্নিকে স্বাক্ষি রেখে বলতে হয়,
এখানেই অন্ধকার। কিছু কিছু নক্ষত্র সূর্যের মতই গ্রহাভিমুখি। ছায়াপথে ফেলে
আসা অভিমান মেখে স্বীকার করে নেয় প্রত্যাশিত পরাজয়। অচেনা কক্ষপথে
পথ হারায় আলোকবর্তিকা। প্রতি শুক্লাদ্বাদশীর রাতে ধরা দেয় অলৌকিক
তারামণ্ডলে। সারারাত জেগে ভাতঘুমের ভেতর সেইসব নক্ষত্রপতনের শব্দ শুনি।
শূন্য
কলহ মেখেছি বলে পাতার মাস্তুলে লিখে রাখি শূন্যতা। ব্যাধ আর ব্যাধির ফারাকে
একটি হ্রস্ব ‘ই’ টেনে বার করি। শূন্যে ছুঁড়ে দিই ইতরামি, ইঙ্গিত, ইবলিশ। শহরের
মধ্যিখানে আসর সাজিয়ে বসে গ্রহণের চাঁদ। শতাব্দীর শেষ পাঁচটি সংশপ্তক এসে
দাঁড়ায় মহাপ্রস্থান পর্বে। বিটপের ছায়ায় বেড়ে ওঠে ঔরসজাতরা। দেখি, মন্থনে
জেগে ওঠা কুণ্ডলী, সুষুম্নাসার। বৃক্ষের দানবীয় মুষলের কাছে হার মানবোনা বলে
অগ্নিশিখায় ফুল ফুটিয়েছি বারবার। মেঘের ঘ্রাণে রেখে এসেছি মোহনবাঁশি, চাঁদের
উত্তাপে স্তন স্ফিত হলে জিহ্বা স্পর্শ করেছি অমোঘ বৃন্তে। তবুও সেই আদিম শূন্যস্থান
পূরণ করতে পারিনি কোনোদিন!
রেবিজ
ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি, পশুহত্যার রাগ লেগে আছে নখে নখে। ধুলো নয়, মাটি নয়
হাতের রেখায় সারি সারি কুকুরের শব। দাহহীন পচে যাওয়া, গলে যাওয়া শুধু।
আলোর জ্ঞান মেঘেদের ঠোঁট ছুঁয়ে গেলে আস্তিনে মুছে রাখি রতিক্লান্ত খঞ্জর,
ওষুধের শিশিতে ইতর প্রাণীর বুক্কন। পোশাকের ভিতর সবুজকান্নার কণ্ঠরোধ
করে রাখি, কেউ যেন গোঙানির আওয়াজ শুনতে না পায়। কেউ যেন আলোর
যাত্রাপথে গাছের ডাল ফেলে না রাখে। কেউ যেন ভুলেও পা না রাখে রক্তাক্ত
জনপদে। নখের কুনিতে লেগে থাকা পাপ বিষাক্ত হয়ে উঠলে চুষে চুষে সাফ
করি পুঁজরক্ত। জলের ভয়ে সরে আসি পৃথিবীর তিনভাগ পুষ্করিণী থেকে।
ছুঁয়ে রাখি বিষ আর রাবিশের ভেতর হারিয়ে যাওয়া সন্ধ্যাতারা। ঝোলাজিভে
চেটে তুলি নিবিড় ভাদ্রমাস......
যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, কোন ব্রিড, বোলো কবি!!’’
রাষ্ট্রনীতি
ঘোষিত নীতির বিরুদ্ধে কোনোদিন যাবনা বলে দুদণ্ড দাঁড়িয়েছি পিছল আঙিনায়।
মাথায় লাল্টুপি, প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো সর্পিল ভ্রূ, চোখের বিছানায় গোধূলির
দিকচক্রবাল। দেখেছি, ধনেশ পাখির চোখে বিষাক্ত কীটের মৃত্যুযন্ত্রণা। স্বর্ণলতায়
ছেয়ে যাওয়া সোনালি রোদ।
না, সে’ঘর রাবীন্দ্রিক ছিলনা। মায়ের থানে জবার মালা আর দু’চারখানি কাঠমল্লিকা
ছড়ানো। পরশুরাতে স্বপ্নে দেখলাম পাড়ার আটাকলে কতরকম কারুবাসনা।
তুষারকণার মতো আটা ছড়িয়ে আছে ঘরময়। চালচুলোহীন ছেলেটি চেটে নেয়
না’বানানো রুটিগুলি।
এখনও তো মন্বন্তর। রগরগে আকাশে পোড়াবাঁশির সুর। ঘোষিত নীতির বিপক্ষে
যাবনা বলেইতো এই অনন্ত আঙিনাযাপন! অকারণ রিরংসায় গোলাপি চাদরে মুড়ে
নেওয়া এই নরদেহ। সন্দেহও! রাতের আকাশ থেকে এক এক করে ছিঁড়ে নেওয়া
রক্তাক্ত বরসাই।
বড় পশুপ্রধান এই মৃত্যুক্ষুধা। প্রতিদিন একটা করে পাঠা বেঁধে রেখেছি সীমান্তের
হাড়িকাঠে। মুণ্ডমালিনী মা আমার ঝুলন্ত জিভে চেটে নেয় রক্তিম দিগন্ত। প্লাবন
থেমে গেলে রক্ত পলাশের বৃন্দগান শুনি। শৃগালে রাষ্ট্রে নীতির বিরুদ্ধে যাওয়ার মতো
বুকের পাটা নেই আর!
Post a Comment