অরিত্র চ্যাটার্জি
তোমার মুখ একটা শহর হয়ে যায়
ঘাসের ওপারে কোথাও একটা পিয়ানো বাজছে
উনবিংশ শতাব্দীর একটা সুর
রেললাইন বরাবর এসে তাদের ঠিক জুড়ে দিল
আকরিক লোহা তামার মাঠ, একদা সরাইখানা
ফেলে যাওয়া বাড়িঘর, সমিতির জীর্ণ পতাকা
টুকরো অবিচুয়ারি, অনেকটা ঝুঁকে পড়ে
সে এইবার দেখে, আসলে অতীতচারী-
কিসের খোঁজে যেন এসেছিল, স্পষ্ট মনে পড়েনা
পিঠের ওপর নরম ওই স্পর্শ- ধীরে ধীরে
চারুলাল এখন, এই নির্জন মাঠটির ওপর
পৃথিবীর একটি নতুন রূপ আবিষ্কার করে
সম্ভাবনাময় এই পৃথিবীতে আরও কিছুদিন
বেঁচে থাকবে বলে, সে চিঠি লেখার কথা ভাবে,
তার সাজানো অক্ষরের ভেতর তোমার মুখ
ক্রমশ একটা শহর হয়ে যায় …
গাধার টুপি
যে ভালো তাকে ভালো বলতেই হবে, কই দেখি, একটু সরে দাঁড়ান, আজকাল রাস্তায় যেভাবে সব গাড়িঘোড়া, ভালো কথা সকালে দুটো চা দিয়েছিলাম না, লিখে রাখো, সব লিখে রাখো, খাতা মেন্টেন করা কি সোজা কাজ, তাছাড়া তুমি ওকে যতটা ভালোবাসো ভেবে দেখো সে তোমায় আদৌ ততখানি কিনা, ফোন করছিস না কেন বাঁ, পাঁচ পাঁচটা ‘মিস কল’ দিলাম টানা, দাদা আমরা কিন্তু আবার ক্যাশ ছাড়া কিছু নেইনা, আমাদের ফিস কবিরাজিখানা কিন্তু খুব বিখ্যাত, খাঁটি ঘিয়ে ভাজা, মেজবাবু সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন এককালে, না না সবকটার তিন কপি জেরক্স নিয়ে কী করবো, লাগবে বড়জোর একটা, এসব আসলে সরকারি প্রসিডিওর, তোরা বুঝবি না, ওই দেখো আসতে না আসতেই সর্দি, হবেনা কেন এক মাথা চুল, তা দাদা কিরকম কাট হবে, নর্মাল নাকি স্পেশাল, হে হে নিয়েই দেখুন না একবার, অন্যরকম অভিজ্ঞতা, তারপর বল, কেমন দেখছ তুমি কলকাতা এতদিন পর, আমেরিকা না হয় বাদ, তুমি কিন্তু ইউরোপ টিউরোপেও একটু চেষ্টা করে দেখতে পারো, সে নাহয় এখন কদিন দেখ, আমার আবার ডারহামে একজন আছেন বিশেষ পরিচিত, হ্যাঁ, আসলে আমরাও তো ভেবেছিলাম এখান থেকে চলে যাবো, বাহ্, শুনলাম তুমি তাহলে চাকরি পেয়ে গেছ, তা থাকা খাওয়ার কী বন্দোবস্ত, ওখানে অবিশ্যি তুমি কাজের লোক পেয়েই যাবে, বরং আমি বলি এইবার আস্তে আস্তে বিয়ে থা করে ফেল, বলি জীবনে সেটেল করতে হবে তো নাকি, তাছাড়া বংশ পরম্পরার একটা ব্যাপার, আমাদের টানাটানি থাকলেও কিন্তু দুইখান ইস্যু, ভাই চারটাকা খুচরো দিয়েন, ভাড়া বেড়ে গেছে কিন্তু অনেকদিন, গলার ওখানটায় একটা ব্যথা, কেন যে বলনা কিছুই, ইস দিস হাও মিডল আর্থ ওয়াস সাপোসড টু লুক লাইক - বড় রাস্তার মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে সে ভাবে, তার সামান্য জ্বর জ্বর ভাব, পুরাতন প্রবৃত্তি দ্রুত ফিরে পেতে সে সিগন্যাল ছাড়াই রাস্তায় পার হয়, অনভ্যস্ত ভঙ্গিতে সাইকেলচারীদের প্রতি হাত তোলে, দূর থেকে দেখা যায় তার মাথায় অদৃশ্য গাধার টুপি …
Post a Comment