পীযূষকান্তি বিশ্বাস
সর্পসিঁড়ি স্বর্গসিঁড়ি
১
নেমে যাওয়া পাতালের সুদীর্ঘ সর্প সঙকুল
অগাধ আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নেমে যাচ্ছি
যাত্রা পথ পিচ্ছিল যেখানে বর্ষা ও বাদল
এই লেখালেখি আমাদের সেখানে কারো ঠিকানা নয়
এই পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া আবহমান
মনু নিয়ে, অন্তর নিয়ে নিদারুণ পিছলে যাওয়া শহস্রফুট
বারো হাজার, তেরো হাজার মনান্তর বরাবর ফেটে যাচ্ছি ।
নিজস্ব ভারেই অগত্যা ফেটে যাচ্ছি, ওহহো ঐ দ্যাখো
ফেটিস সন্তানসম্ভবা অঙ্কুরোদ্গম চিত্র থেকে বৃষ্টি নেমেছে
ধ্বস অবশ্যম্ভাবী যখন এই ঢালান বক্ররেখায়
প্রত্যেকটি প্রলয় মুহূর্তে তুমি নির্ভীক বেজে ওঠো নীরো,
তুমিই তো একমাত্র জেনেছো ভিজে ওঠা পাহাড়ের হাল
জল-বেহালার ছড়ে দেখছো আমায়
কেমন যেন ফেটে আমি চৌচির হয়ে যাচ্ছি ।
২
চৌচির প্রত্যেকবার ঠিক যথেষ্ট ফাটা চৌচির নয়,
পশ্চিমী রশ্মিরেখা বরাবর আমারই দেখার অনিবার্য ভুল,
আমাকে নদীর পাশে দাঁড় করিয়ে যখন সবুজ চেপে ধরেছে,
ভিজে ওঠা প্যান্টের নীচে সেই ভাবে গভীরতর নয় আবহমান
অবিন্যস্ত পরিণতি নিয়ে নেমে যাচ্ছি পাতাল
যেভাবে দেখতে পাচ্ছি ধ্বস নামা দৃশ্যে ডুবে যাচ্ছি আমি
সন্তানের মুখ থেকে শুনতে পাচ্ছি, ডেকে উঠছে 'বাবা'
সেই ভাবে দেখতে গেলে পাহাড় যথেষ্ট পাহাড়ি নয়,
আনসাইন্ড ইন্টিজারে সেইভাবে পাতাল নয় অনন্ত গভীর
আত্মীয়বর্গের সঙ্গে বরং খানিকটা হেসেকেঁদে ওঠা সুখ চিৎকার ।
৩)
নেমে যাওয়া মানে মাইনাস উঠে যাওয়া
তুমি তাকে এই সর্প দিয়ে আচ্ছন্ন করেছো মাত্র
সাপে কাঁটা মানে যেই ভাবে বিষযন্ত্রনায় ককিয়ে ওঠা
আমরা যারা দড়ি বেঁধে পাহাড়কে গোরু বানিয়েছি
গরু উঠছে পাহাড় বেয়ে উত্তাল উজান আবহাওয়ায়
উপর থেকে নীচে অথবা নীচে থেকে উপর কোন দিকচিহ্ন নয় ।
আমাদের প্রত্যেকের পাহাড়ি অস্ত্র নিয়ে খুঁড়ে চলি পাহাড়
পাহাড় থেকে জলের সঙ্গে অঝোরে ঝরে পড়ছে পাহাড়
পাহাড় থেকে পাহাড় কুড়িয়ে নিয়ে আমার সন্তান সন্ততিগণ
শিবলিঙ্গ কাঁধে করে খাদ থেকে উঠে আসছে যে অনন্তকাল
সর্পদিয়ে, রজ্জু দিয়ে যে প্রশ্নচিহ্ন রেখে যাচ্ছো হে পথিক
উত্তরমালার চিত্রে কেউ দ্যাখো স্বর্গসিঁড়ি সহ উড়ান ভরেছে ।
৪)
উত্তর দেওয়া সব সময় সঠিক উত্তর হবে না
চিহ্নের মাঝে কিছু সংকেত থাকুক, উহ্য থাকুক বাক্যসমুহ
বুঝে ওঠার আগে যে সব চিহ্নমালা আকার বদলেছে
দিক বুঝে বেঁকে গেছে গতিপ্রবাহের রামগঙ্গার স্রোত
ষাট হাজার সন্তানসহ আমি অনন্ত এই ভস্ম মেখে এইখানে বসে আছি
সেইভাবে আমার কাছে কোন প্রশ্ন নেই সঠিক বা বেঠিক
শুধু জানি, আমি আছি আমাতেই সম্পূর্ণ কোন প্রশ্নচিহ্ন ছাড়া
যেহেতু তুমি জানতে চাইছো জল কেন গড়ায় নিচু ঢালানে
পাহাড়কে প্রশ্ন তুমি ভেবেছো সেই একমাত্র উর্ধমুখী কিনা
এই সমস্ত আমার কাছে সেই ভাবে প্রশ্নপত্র নয়, এই সব আমার জানা
অযত্নে বেড়ে ওঠা ভেরেণ্ডা গাছ থেকে আমি এইসব জেনেছি
যেহেতু প্রশ্ন সব সময় সঠিক প্রশ্নপত্র নয়, সেই কারণে
উত্তর দেওয়া সব সময় সঠিক উত্তর হবে না ।
৫)
তুমি তার সিঁড়ি দেখেছো, তার অনুক্ষণ অবতরণ দ্যাখোনি
সে কোথায় পৌঁছেছে, সে সেখানে পৌঁছে হেসেছে না কেঁদেছে
আমি এই উত্তরপর্বে পর্বতের শিখরে অবস্থান করছি
এই অবস্থান বরাবর আমি সেই মতো লিখতে গিয়ে ফেটে যাচ্ছি
আমার কলম ফেটে যাচ্ছে, কাগজ ফেটে যাচ্ছে অক্ষর সমেত
পাকদণ্ডী মনুমেন্ট শিখর আমার ভিতর অব্দি ফাটিয়ে দিয়েছে
আমার সত্যি একটা সিঁড়ির প্রয়োজন ,আসলে নামতে চাইছি
আমি পাহাড়কে আর পাহাড় ভাবতে পারছি না
অসম্ভবের চাপ থেকে সরে আসার একান্ত প্রয়োজন
প্রয়োজন ক্যামেরাবিহীন এই পাইনের জঙ্গল, একান্তে ঝরে পড়া নদী
আমি ফিরে আসতে চাইছি সভ্য দুনিয়ার নিষ্প্রয়োজন প্রতিযোগিতা থেকে
স্থিতিস্থাপকতার নিম্নতম অবস্থানের ফিরে আসার জন্য
আমার একটি সিঁড়ির প্রয়োজন অথচ যে সিঁড়িকে
আমি পাহাড়ের নীচে নামার জন্য চাইছি একান্ত প্রাণপণ
যে মনুষ্য নির্মিত সিঁড়িকে আমি নিজেই যুগ যুগান্তরে,
মনু মনন্তরে ইস্তেমাল করেছি শিখর আরোহণে ।
খুব ভালো হয়েছে
ReplyDelete