সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
আসলে, রয়েছেন অনেকেই । প্রচ্ছন্ন ভাবে, নিরপেক্ষ ভাবে, নয়নে নয়নে । এর পিছনে পূর্বপুরুষের ইতিহাস থাকা দরকার, মাথায় তাদের আশীর্বাদ থাকা দরকার । এই ভাবে নয়, তাদেরকে অনুকরণ করবেন উত্তরসূরিরা । বরং উত্তরসূরিদের কাছে সচেতনভাবে উপস্থিত থাকবেন দিল্লির আকাশে বাতাসে একসময় যে কবিরা নিঃশ্বাস নিয়েছেন ।
তাহলে দাঁড়ালো কি? পূর্বপুরুষ সত্য, মানুষ সত্য । মনুষ্য যখন সত্য, তার বিস্তার ও ক্রমবিকাশ সত্য । প্রবাস হোক, বিদেশ বাসই হোক । মায়ের ভাষাটা তো বাংলা । মাতৃভাষার মণিজালে আবদ্ধ তার ভাষাভাষী । সাহিত্য হোক বা না হোক, কিছু লিখে ওঠার তাড়না থেকে নিস্তার কোথায় ? বঙ্গভূমির মূল ভূখণ্ড থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে জন্ম নিচ্ছে যে বাংলা সাহিত্য, তার ভাব,ভাষা, ছন্দ, বিষয় ও কাহিনী আলাদা হবে । এ এক গুল্মলতার দেশ , গ্রীষ্মে সাতচল্লিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড , শীতে শূন্য ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ।
যদিও, দিল্লিবাসীর দেহলিজ, তবে তা দিল্লিতে আবদ্ধ নেই । দেহলিজ দূর রাজস্থান, পাঞ্জাব থেকে মুম্বাই পাড়ি দিয়েছে । দেহলিজ ঘুরে এসেছে বঙ্গপ্রদেশ । দেহলিজের সঙ্গে বাংলা ভাষার মূল ভূখন্ড ঘুরে এসেছে আমাদের পূর্বপুরুষরাও । অথচ জানেন, এই যাপন আলাদা , এর রং আলাদা, এর পোশাক, পরিচ্ছদ, প্রেম , ভালোবাসা, পড়শি , পূজা পার্বণ আলাদা । সুতরাং সাহিত্য চর্চায় 'প্রবাসী' শব্দটা আবশ্যিক । এইটুকু ভৌগলিক বোধহয় বঙ্গকবি সম্প্রদায় স্বীকার করবেন । যারা , বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত তারা ডায়াস্পোরা সাহিত্যিকদের মান্য করেন । বঙ্গভূমির কবিরাও সেটা স্বীকার করেন । যেটা করেন না সেটা হলো, বাংলা ভাষাকে কুক্ষিগত করে রাখা । এক শহরের মালিকানা ভাবা । তেনারা ভাবেন, তারাই যেন একমাত্র বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছেন, তারাই মালিক পক্ষ । মনে করেন আর 'প্রবাসী' নামের সাহিত্য চর্চা একভাবে বাণের জলে ভেসে এসেছে ।
দেহলিজ, তার নিজের কাজ করেছে । নিজের জন্য করাটা কোনদিনই অন্যায় নয় । দেহলিজ, একা করেনি । দেহলিজ তার সহযোগী সমস্ত পত্রপত্রিকা, কবি , কাহিনীকার, নাট্যকারদের ইকো সিস্টেম । বাংলা সাহিত্যের লাইফলাইন । কথাটা একটি এম্বিশাস হয়ে গেলো । তা যাক । দেহলিজের হয়ে ওঠার জন্য এইটুকু আত্মবিশ্বাস দরকার ছিলো ।
দিল্লির সঙ্গে মিশে গিয়েছে দেহলিজ ও তামাম বাংলাভাষা । বাংলা ভাষায় মিশিয়ে দিয়েছে তামাম । আমরা তার ঢেউ গুনছি । এই যারা মঞ্জিল শব্দটা শোনে নি, তারা আজ বেশী করে তন্দুরী ও শাহি পানীর দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ করছে । শাড়ি ছেড়ে তাদের পরনে উঠে এসেছে জিন্স টপ । একমাত্র সৌরাংশু আর টেনিদা ছাড়া দিল্লির বুকে কাউকে তো ধুতি পরে ঘুরে বেড়াতে দেখলাম না । মঞ্জিল নিয়ে যারা এতো সংশয়ে ছিলো, তার নিঃসংশয় হয়েছে । তারাও তামামে যোগদান করেছে । বরং দিল্লির রক্তক্ষয়ী ইতিহাসে অঝোরে বৃষ্টি নেমেছে । যেখানে দিল্লিতে বৃষ্টি স্বাভাবিক নহে ।
দেহলিজ, আজ ১২ তম সংখ্যায় পড়লো । তবু ধীর পায়ে স্থির হয়ে উঠেছে মঞ্জিল । এর পর সংখ্যায় হয়তো আর সম্পাদকীয় লেখার আর তেমন গুরুত্ব থাকবে না । আমিও চাই যেন সম্পাদকীয় লেখার দরকার না পড়ে ।
পীযূষকান্তি বিশ্বাস
সম্পাদক দেহলিজ
মহাবীর এনক্লেভ , দিল্লি -১১০০৪৫
Post a Comment