অমলেন্দু চক্রবর্তী
-০= মন সৃজন =০-
তবলার লহরা আর মালকোশ এর যুগলবন্দী থেকে যে,ভাবে সুরের মূর্ছনায় শ্রোতাদের মগ্ন'মুগ্ধতাই ডুবিয়ে রাখা। কাক ভোরে। ঐ যে ওস্তাদের মার শেষ রাত। বাইরে পাখির কুজন মানুষের হাঁকডাক, গাড়ি'ঘোড়ার চহল'পহল। চলমান জীবনের কিয়ৎমূহুর্ত। প্রগাঢ় স্মৃতির ঐশ্বর্য ধরা থাকে।
আসোর ভাঙ্গতেই যে যার আস্তানা মুখো। হোলনাইটে র আলোচনা। সময় যে এক সোনায় মোড়া চুপড়ি, অথবা সময় যে দুঃসময়ের অন্ধকার অনন্ত রাত। পাহিয়ার পালা'বদল বত্। কখনো অর্থপূর্ণ, আবার কখনও বা অনর্থক। সাধনা এন্টারটেইনমেন্ট, উপভোগের বিস্তোর ফিরিস্তি। ভোরের আলো আর খোলা মাঠ দিয়ে যুগলে হেঁটে যেতে যেতে। মৌমিতার সেলফোন গেয়ে উঠলো "আমার সকল রসের ধারা তোমাতেই আজ হোক্ না.....
— হ্যালো
— কেমন লাগলো
—অসাধারণ ! এখনো লেগে আছে " ওপারে ভোরের পশলা হাসির শিউলি জুঁই হয়তো শারতীক হাফ্ হিমেল বাতাসও।
—আমরা লাইভ দেখছিলাম লোকাল চ্যানেল থেকে।
—মাসিমা কেমন আছেন।
—ঐ রমই, তাইতো
—বুঝতে পারছি।
— সেই মতই চলতে হয়। কখন যে, কি হয় বলাতো যায়না না '
—তা পাকাফল ডাঁটি ছাড়লেই টুপ্।
আসব একদিকে মাসিমা দেখতে এখন রাখছি'।
—হ্যাঁহ্যাঁ' মাঠ পেরোতেই রেল কলোনী। দূর্গা'দালান বড়সড় ক্লাব। যেখানে আধুনিক জিম্ ও রাখা হয়েছে। আবার বছরে চার পাঁচবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গীত নৃত্য আবৃত্তি থিয়েটার যাত্রাপালা বাঙালী প্রাণবন্ত জাত। যেখানেই থাকুন,দলদলি দূগ্গা'কালি। এদিকে দুএকটা পলাশ শিমুল। আর বর্ডারের মত একখানা বিরাট নালা। ওপার টা প্রাইভেট এরিয়া, সুদাম্'ডি ডিহ্ শব্দের অর্থ ছোটবস্তি। মানে কয়েকটি বাড়ি অল্প পরিসরে। বাদবাকি তো ঝাড়জঙ্গল ডোবাখানা আর মাইলটাক পার হলেই দামদর নদ। মৌমিতার চোখ জ্বালা করে। রাত জাগার। হেমন্ত চুপচাপ হাঁটতে হাঁটতে সিগারেট শেষ হয়েএল। বাসার সামনে এসে পড়েছে। হেমন্ত একটি বেসরকারী ব্যাঙ্কের অফিসার। এখন শনি রবিবার অফ তাই। রবিবার বলে একটু বিশ্রাম হয়ে যায়। তার ওপর নব দম্পতি। ছুটির দিনমান হৌক আর নিশীথ রাত। খিদের খাঁউ খাঁউ টা উভয়েরই সোমান বেগবান। শঙ্খলাগা গোছের অতৃপ্ত তন্বীদেহা'বয়ব যৌনক্ষুধাবত্ । সিঁড়ি ভাঙ্গা শুরু হয়েছে কি বাড়িউলি র বৌমা "হোলনাইট কেমন হলো?"
সিঁড়ি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ক্লান্ত পায়ে। "দারুণ গো, সব বড় বড় শিল্পী সব পরে বলব"। দক্ষিণ জানালা দিয়ে বাতাস আর বাঁশঝোপের ফাঁকগলে বিশাল বাঁধ। শীত'বাড়লে রাত্তিরে শিয়ালের হুক্কাহুয়া এপর্যন্ত। মৌমিতার ত্বক প্রকৃতই কিশোরী'সুলভ। নিচের ঐ বৌ বলে। "তোমাকে দেখলে মনেলাগে, বয়স এক'কুড়ি'পাঁচ। ফেসিয়াল পার্লার যাওকি নাকি?
— না গো হয় কই ? তবে বয়স ঐ এক'কুড়ি দশ, পাঁচ নয়"। মনে মনে ভাবে ঠিক টা না বললেই ভালো ছিল। না পাঁচকান হয়ে যায়। ভাববে বুড়ি'বয়সে বিয়ে হয়েছে। কি আর করা ! তীর ছাড়া হয়েগিয়েছে আর তো কিছু করার নেই। যাকগে যাক্ বয়েইগেল বুড়ি ভাবলো তো। ক্ষেতি'র ক্ষতি তো হয়না চাষাবাদ চলতে থাক, শস্য ঘরে তুলে নিই তাপ্পর দেখাযাবে। জীবন'জুড়ে ঋতু নয়। ঋতু জুড়ে জীবনের, অনন্ত পথ হাঁটা গনত্'কারি র গণিতে আয়ুর হিসেব নেই। তাই ক্ষমতার দৌড়েই বেগগতি প্রগতি। সময় শ্লথধির বেগতিক সব সময় নির্ভর।
ক্ষেত্রফল বাড়বে দুই থেকে তিন হবে।
অগড়ম-বগড়ম ইতিউতি ভাবনার, মধ্যে রাতজাগা র কারণ মৌমিতা ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে পড়ে হেমন্তও। বর্ষা শেষ তাই সব বাড়িই ধুসর শ্যাওলা। তাই অমাবস্যা রাত্রিতে আলো চলেগেল অন্ধকার আরো গাঢ় মনেহয়। দুই তলার ছাদ থেকে দূরের বাঁধও অসচ্ছ। খুব কাছে না এলে টেরই পাওয়া যায় না। তাই নির্ঘুম রাত আর নির্জন ছাদ। রোমান্টিক। এই সেচ্ছনির্বাসন দুটি জীবনের মোক্ষমূল। খেলাশেষে খোলাক্লান্তি নিয়ে ব্যাক টু প্যাবিলিয়ান অপেক্ষা তো থাকবেই না ! ফসলের হক্'দার মহাজন দেশবাড়িতে। নব প্রজন্মের প্রত্যাশাই প্রতীক্ষারত।
—আজ দিবানিদ্রা দিই রাতের ঘুমের বারোটা বাজলো।কাল আবার ডিউটি। তোমার কাজের ব্যাঘাত বল ! "
— না ঘুম আনতে হবে।
—কি ভাবে ?
— তুমি জানোনা?
—না, ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে ! সেতো একজন ঘুমুবে"। ওরা কাছাকাছি আসে।
—না, ঘুমপাড়ানি গান নয়"। মৌমিতা জানে তবুও পহল্ করিবে কেন ? শরৎকালের অন্ধকার পক্ষে, হেমন্ত আসতে চাইলে তার না তাগিদ ! ভালোবাসা আরো অনেক গভীরে প্রেম, তাকে মন্ত্রেমুগ্ধের মতো স্বপ্নতন্দ্রায় ডানা মেলে সঙ্গে উড়ে উড়ে উড়ে এক আকশ থেকে অন্য আকাশ এক চরাচর থেকে অন্য চরাচর। বাতাসে র ঢেউ, ঢেউ এর বাড়ি। জোয়ার ভাটা। হঠাৎ মধ্যাকর্ষণের বিভৎস ভয়। বার বার তার পুনরাবৃত্তি আবার স্বাভাবিক। সঞ্চরণশীল হয়ে।
হেমন্ত জেনেছে এই কদিনে চারকের কথা কামদেব। মৌমিতার বিষয় পি এইচ ডি, প্রত্নতত্ব। বায়োলজি। এবং রসায়ন ভৌত আরো হৃদয় মন প্রাণ শরীর আরও কতো উর্জাপুর্জা। জীবন জানতে হলে যা যা জানা লাগে। সব শ্রমের ক্লান্তি ক্ষুধা আর নিদ্রা , উনার আপাতত নিদ্রাসনে র সুসজ্জিত সোজ্জায় গমন করিলেন।
Post a Comment