মানিক বৈরাগী
মধুমাস বহিয়া যায়
আম-জাম-কাঁঠাল-আনারসের যৌগরসে
বাষ্পীভূত ধূম্রজলের তৃষ্ণায়
মধুমাস ফুরিয়ে যায়
আশায় আশায়।
ফলজ রসের মহিমা কজনেই বোঝে
শস্যের ছেয়ে টুপির কদর যেখানে
ফতোয়া চাষের মচ্ছব চলে আকালের দেশে
বুকের মাঝে হাহাকার বাড়ে
ধূম্রজলের তৃষ্ণায়।
ফতোয়ার দাপটে তটস্থ তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ার চুলা
ভাতের রসের চুলায় জ্বলে না উনুন
অলস পড়ে আছে মাটির মটকা ও পাতিল
মধুমাস বহিয়া যায়
আশায় আশায়।
বৃষ্টি
জানালা খুলে দিলেই
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে বৃষ্টি
গুড়ুম গুড়ুম গজরাতে থাকে হিংসুটে বিজলি
বলে, ওভাবে আর জড়াজড়ি করে লেপটে থেকো না
জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগবে সপ্তাহ কয়েকদিন
বিজলিকে বলি, কাছে এসো না
হয়ে যাব জ্বলেপুড়ে অঙ্গার
কুসুম কুসুম বৃষ্টির ছন্দে বিছানায় গড়াগড়ি দিই
বৃষ্টিতেই শস্য উৎপাদন
বৃষ্টিতে প্রশান্তি।
পাশাখেলা
বাহারি বেদনার পাতাবাহার দুশ্চিন্তারা
আগাছার মতো হুড়হুড়িয়ে বাড়ে
মনকে বলি চিন্তা করো না, করো উল্লাস
উদযাপন করো যন্ত্রণাময় বেদনার উৎসব।
কষ্টের পাশে শুয়ে থাকে দুঃখ
ক্ষণে ক্ষণে কাতরায় রূপবতী বেদনা।
রোগে শোকে অসুখদা বলে
আরও কাছে এসো, আমার বুকে বুক মেলাও
পূর্ণিমা তিথিতে তোমাকে নিয়ে যাব
অমরাবতীর রাজ্যে
রক্তমাংসে হাড়ে মজ্জায় আমরা পাশা খেলব।
অপেক্ষা
শারদের হিম হিম হাওয়ায় শিহরন জাগে
বৈশাখের বেগানা মেঘ ডাকে আয় আয়
উডুঝড এলোমেলো হাওয়ারা দিশেহারা
ঝাউবীথি শিরশির কম্পনে জড়োসড়ো
আচমকা চমকে উঠে ঝলকে দেয় আকাশ
দূরের সমুদ্র কিনারে ঢেউ গোনে, জাল মারে
ডর-ভয়হীন একাকী জেলে
দূরে বজ্রপাতের শব্দে উড়ে গেছে পাখি
পরানপাখি খাঁচায় ভরে বসে আছি তীরে
যদি সে আসে ঢেউয়ের সারস হয়ে।
সাঁইজির তরে
জল নই
তাই তরল হতে পারিনি
কোনো পাত্রে হয়নি স্থান
জড় নই বলে মনুষ্য
অনুভব করি বলেই
নারী-পুরূষ হয়েও হলাম না,
তথাপি তো নই বৃহন্নলা।
আদর্শ সে অনুভবের ভোঁতাছুরি,
মাতামুহুরির কুমে ডোবে
অথচ ভাসে না
অতলের তলে জমা অভিমান।
গুরু তোমার নূরে আগুন জ্বলে,
পড়শি জ্বালায় চেরাগ,
চেরাগের তলে আঁধার দেখো
সেই আঁধারে আমায় না দেখো।
সাঁইজি তোমার ভজনে আশেক
জিকিরের রব বায়ুর কানে
খানকার গিলাফ কাঁদে
কেউ দেখে না
কেউ শোনে না।
পশু-পাখি হতাম যদি
না থাকত ডর হাশরের
মনুষ্য করে বানাইলা
তবে কেন দিলা জ্বরা
সংশয়ে আছি সাঁই,
সংশয় কেন কাটে না
বিদ্যা-বুদ্ধি কেন দিলা
অন্তরে অন্তর্যামী?
Post a Comment